“২০১৫ সালে উখিয়ার গহীন অরণ্যে জঙ্গি স্থাপনা নির্মাণের মূলহোতা জাহাঙ্গীর এখনো অধরা : (নেপথ্যে মাল্টি সার্ভ ইন্টারন্যাশনাল এর প্রধান নির্বাহী মো: জুবাইর ও পরিচালক লাইলা বেগম”
২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও স্থানীয় দৈনিকের রিপোর্টে উঠে আসে উখিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ও রাজা পালং ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীর নিজস্ব তত্ত্বাবধানে, তারই ইউনিয়নের মধুরছড়া দুর্গম পাহাড়ে (বর্তমানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পসংলগ্ন) রহস্যময় স্থাপনা গড়ে উঠে। যেটাকে জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে অভিহিত করা হয়। প্রায় ৫০ টি সেমিপাকা ঘর, হাসপাতাল ও মসজিদ সব মিলিয়ে যেন একটি কমপ্লেক্স গড়ে তুলেন। সশস্ত্র পাহারা বসিয়ে তৎকালীন সময়ে গহীন অরণ্যে এত বড় অবকাঠামো প্রকল্প গড়ে তোলার মূল উদ্দেশ্য ছিল রোহিঙ্গা জঙ্গিদের নিয়ে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ শিবির গড়ে তোলা।
অভিযোগ ছিল ১৫/২০ একর সরকারী বনভূমি দখল করে জঙ্গি সম্পৃক্ত বিদেশি এনজিও এবং তুরস্কের কয়েকটি এনজিওর প্রায় ২৬ কোটি টাকার অনুদানে দুর্গম পাহাড়ে রোহিঙ্গা জঙ্গিদের প্রশিক্ষণের জন্য এসব স্থাপনা নির্মাণ করতে সহায়তা দেওয়া হয়েছিল। যদিওবা রাজাপালং ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীর পৃষ্ঠপোষকতায় জঙ্গি স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছিল কিন্তু সেখানে দাতা সংস্থা তুরস্ক ভিত্তিক এনজিওর পক্ষ থেকে সমন্বয়কারীর দায়িত্বে ছিলেন বর্তমানে মাল্টি সার্ভ ইন্টারন্যাশনাল এনজিওর সাধারণ সম্পাদক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জুবায়ের ও নির্বাহী সদস্য (পরিচালক) লায়লা বেগম। স্থানীয়দের দাবি এসব স্থাপনা নির্মাণের জন্য জঙ্গি সম্পৃক্ত দাতা এনজিওর অর্থ জোগাড় করতেন মাল্টি সার্ভ ইন্টারন্যাশনাল এর প্রধান নির্বাহী মোঃ জুবায়ের ও পরিচালক লায়লা বেগম আর স্থানীয়ভাবে তদারিকের দায়িত্ব ছিলেন জুবায়ের এর আপন মামা রাজা পালং ৬ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজ মিয়া প্রকাশ মফিজ কন্ট্রাক্টর।
এসব ঘটনায় বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে ২০১৫ সালের ৯ এপ্রিল আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ৪০০ সদস্য নিয়ে কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এর নেতৃত্বে যৌথবাহিনী উচ্ছেদ করতে গিয়েছিল। সে সময় জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী রীতিমত রাষ্ট্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র অবস্থান নেন। শেষ পর্যন্ত স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি ও কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট একেএম আহমদ হোসেন ঘটনাস্থলে এসে হস্তক্ষেপ করেন। এক পর্যায়ে অসংখ্য প্রাণ হানির ভয়ে উচ্ছেদ না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফিরে আসেন যৌথবাহিনী। ওই সময় উখিয়ায় সদরে জেলা পরিষদ ডাকবাংলাতে যৌথ বাহিনী, জেলা প্রশাসন, স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সাথে একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ঐ স্থাপনা গুলো সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সেই সাথে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে এরকম পরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণের অর্থায়নের উৎস সম্পর্কে জানানোর নির্দেশনা দেওয়া হয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
এসব কারণে পরবর্তী এক সপ্তাহের জন্য উচ্ছেদ কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়। কিন্তু এক সপ্তাহের কথা বলে দীর্ঘ দুমাস স্থাপনা গুলো উচ্ছেদ না হওয়ায় জনগণের মনে নানা প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। অবশেষে সরকারের শীর্ষ মহলের আদেশে ২০১৫ সালের ৪টা জুন ভোর রাতে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে স্থাপনা গুলো ঘুড়িয়ে দিতে সক্ষম হয় কক্সবাজারের জেলা প্রশাসন।
সে সময়ে উক্ত ঘটনায় বন কর্মীদের উপর হামলার ঘটনায় বন বিভাগের পক্ষ থেকে উখিয়া থানায় দুটি মামলা করা হলেও ঘটনার মূল হোতা জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীর ক্ষমতার দাপটের কারণে তার বিরুদ্ধে তৎকালীন প্রশাসন কোন মামলা নিতে পারেনি। জাহাঙ্গীরের এমন কর্মকান্ডে সে সময়ের আওয়ামী লীগের উপজেলা ও জেলার নেতারা কিছু বলতে বিব্রত বোধ করতেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক আওয়ামী লীগ নেতা ও সরকারি কর্মকর্তারা তার এহেন কর্মকান্ডকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল বলে মনে করেন।
নাগরিক সমাজ মনে করেন সরকারদলীয় সাবেক সাংসদ বদির শ্যালক ও উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার সুবাদে তিনি রীতিমতো একটি রাষ্ট্রের সুশৃংখল বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র অবস্থান নেওয়া সত্বেও সেদিন তাকে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। সেই সাথে উক্ত ঘটনার অর্থ যোগান দাতা মাল্টি-সার্ভ ইন্টারন্যাশনাল এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জুবায়ের ও পরিচালক (সদস্য) লায়লা বেগম এর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে পারেনি তৎকালীন প্রশাসন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিএনপি নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন একটা সময় সরকার বিরোধী শক্তিদের দমন করতে জঙ্গি নাটক সাজাতেন অথচ ক্ষমতাসীন নিজদল আওয়ামী লীগ এর অনেক নেতাদের জঙ্গি কানেকশন থাকলেও তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেননি। ঘটনার দীর্ঘ নয় বছর পর নাগরিক সমাজের প্রত্যাশা ঘটনার মূল হোতা, অর্থদাতা, অর্থ সংগ্রহকারী, স্থানীয় সমন্বয়কারী এবং তাদের সহযোগী লাঠিয়াল বাহিনীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে স্থানীয় সচেতন মহল।
ছবিতে উপরে জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী ও নিচে মো: জুবায়ের।