সবে হাইস্কুল পাস করেছেন ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক। বয়স মাত্র ১৬। যাকে বলে সুইট সিক্সটিন! কিন্তু ম্যাক্সের সময়টা তেমন সুইট কাটছিল না। স্রেফ একটা চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিল মাথার ভেতর। সেটাকে দুশ্চিন্তা বলাই ভালো। শিগগিরই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হবে। কিন্তু সেখানে কী নিয়ে পড়ালেখা করবেন, তা নিয়ে বেশ দ্বিধায় আছেন। একবার ভাবলেন, সংগীতই বেছে নেবেন। পিয়ানোতে হাতটা বেশ পাকা। গানেও কম যান না। সেই বয়সে কিছুটা নামডাকও হয়েছে। কিন্তু ক্যারিয়ার হিসেবে সেটা বেছে নিলে কেমন হবে?
এক অধ্যাপককে কথাটা জিজ্ঞেস করলেন কিশোর প্ল্যাঙ্ক। শুনেই খেপে গেলেন অধ্যাপক। কর্কশভাবে উত্তর দিলেন, ‘এ কথা যদি জিজ্ঞেস করতে হয়, তাহলে সংগীত নিয়ে পড়ালেখা না করাই ভালো। অন্য কিছু খুঁজে নাও গিয়ে।’
আবারও সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে লাগলেন প্ল্যাঙ্ক। উদ্ধার করতে এগিয়ে এলেন বাবা উইলহেম প্ল্যাঙ্ক। ১৮৭৪ সালের শেষ দিকে একটা সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা করে দিলেন অধ্যাপক ফিলিপ ভন জলির সঙ্গে। জার্মানির মিউনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরা পদার্থবিদ তিনি। কিন্তু অবাক কাণ্ড! নিজে পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক হয়েও প্ল্যাঙ্ককে পদার্থবিজ্ঞানে পড়তে নিরুৎসাহিত করলেন জলি। তাঁর যুক্তি, পদার্থবিজ্ঞানের প্রায় সবকিছু আবিষ্কৃত হয়ে গেছে। এখন যেটুকু বাকি আছে, তা অগুরুত্বপূর্ণ। তাই পদার্থবিজ্ঞানের ক্যারিয়ার মানে ভবিষ্যৎ নির্ঘাত অন্ধকার। প্ল্যাঙ্ককে তিনি পদার্থবিদ্যায় নয়, গণিতে পড়ার পরামর্শ দেন।
পদার্থবিজ্ঞানের ভবিষ্যৎ নিয়ে এ মন্তব্যের কারণে ফিলিপ ভন জলিকে ইতিহাস ক্ষমা করেনি। তবে শুধু জলিকে দোষ দিয়েও লাভ নেই। একই ভুল করেছেন সেকালের নামকরা আরও অনেক পদার্থবিদ। যেমন নোবেলজয়ী মার্কিন বিজ্ঞানী আলবার্ট এ মাইকেলসন। সহকর্মী এডওয়ার্ড মর্লির সঙ্গে ১৮৮৭ সালে একটা পরীক্ষা করেন তিনি। সেটি মাইকেলসন-মর্লির পরীক্ষা নামে বিখ্যাত। এর মাধ্যমে সেকালের প্রচলিত অলীক, অবাস্তব ইথারতত্ত্ব বাতিল করেন তাঁরা। বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব গড়ে তোলার পেছনে এটিই ইন্ধন জোগায় আইনস্টাইনকে।