শামীমুল ইসলাম ফয়সাল, উখিয়া :

উখিয়ায় তুলনামুলক কম মজুরীতে রোহিঙ্গা শ্রমিক দিয়ে প্রাকৃতিক সম্পদ পাহাড় কেটে উজাড় করা রীতিতে পরিণত হয়েছে।

রাতের আধারকে পুঁজি করে চলা পরিবেশ বিরোধী এই কার্যক্রমের কারণে ঘটেছে নির্মম প্রাণহানিও।

গত ২৯ মার্চ, কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের আওতাভুক্ত উখিয়া সদর বিটের ওয়ালাপালং মৌজার আরএস ৮২৬৪ নং দাগের সংরক্ষিত বনভূমির পাহাড় কাটতে গিয়ে মাটি চাপায় তিন রোহিঙ্গা শ্রমিকের মৃত্যু হয়।

এঘটনার পর অইস্থানে পাহাড় কাটায় জড়িত ৬ জনের বিরুদ্ধে বনবিভাগ দুটি মামলা দায়ের করে। এছাড়াও উখিয়া থানায় নিহত রোহিঙ্গা শ্রমিক নুর কবিরের পিতা সুলতান আহমেদ বাদি দায়ের করেন মামলা।

প্রাণহানি ও প্রশাসনের আইনি তৎপরতার পরও ঠনক নড়েনি পাহাড় কাটায় জড়িত অসাধুদের।

রাজাপালং ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড এর আমিন পাড়া গ্রামে একটি পাহাড়ের দুই তৃতীয়াংশই কেটে ফেলা হয়েছে, সমতল করে যেখানে নির্মাণ করা হচ্ছে সেমি পাকা বাড়ি।

প্রশাসনের চোখ এড়াতে ত্রিপল ছাউনি দিয়ে রোহিঙ্গা শ্রমিক দিয়ে পাহাড় কাটার পাশাপাশি বাড়িটি নির্মাণের কাজ করছেন আমিন পাড়ার আব্দুল হক ও তার পুত্র আবুল হাসেম।

উখিয়ার ১নং/ইস্ট রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বাস করা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোহিঙ্গা যুবক জানান, টানা পাঁচ দিন মাত্র ৫০০ টাকা দৈনিক মজুরিতে সেখানে তিনি পাহাড়ের মাটি কাটার কাজ করেছেন।

অই যুবক বলেন, ” আমি সহ আমার ব্লকের আরো ১৮ জন যুবক প্রতিদিন রাতে সেখানে মাটি কেটেছি,
আমাদের মাঝি এখানকার একজনের সাথে কন্ট্রাক নিয়েছে।”

এপ্রসঙ্গে জানতে চাইলে আব্দুল হকের পুত্র আবুল হাশেম জায়গাটি তার বাবার নামে খতিয়ানভুক্ত বলে দাবী করেন।

বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ ধারা ৬ এর (খ) অনুযায়ী , কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কতৃর্ক সরকারী বা আধা-সরকারী বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন বা দখলাধীন বা ব্যক্তিমালিকানাধীন পাহাড় ও টিলা কর্তন বা মোচন করা যাবে না।

নির্বিচারে পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করা কি বৈধ এবং এক্ষেত্রে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন আছে কিনা? এমন প্রশ্ন করা হলে আবুল হাশেম এড়িয়ে যান।

পাহাড় নিধন চক্রের অপতৎপরতা থামাতে না পারলে বড় ধরণের পরিবেশ বিপর্যয় সহ ফের প্রাণহানির শংকা করছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় পরিবেশকর্মী জসিম আজাদ বলেন, “পৃথিবীর পেরেক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় পাহাড়কে। প্রাকৃতিক এই সম্পদ নিধন করা গুরুতর অপরাধ। জন সচেতনতা তৈরি না হলে পরিবেশের ক্ষতিসাধন কিংবা পাহাড় কাটতে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনা থামবে না।”

উখিয়া রেঞ্জের বন কর্মকর্তা গাজী শফিউল আলম বলেন, ” পাহাড় কাটা বন্ধে মামলা দায়ের সহ নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রেখেছে বনবিভাগ তবে জনবল সংকট সহ বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে বৃহৎ পরিসরে নজরদারি ব্যহত হচ্ছে।”

By Editor

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *