নিজস্ব প্রতিবেদক।
কক্সবাজারের উখিয়ায় চেহারা দেখে জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে প্রশাসন। সাম্প্রতিক সময়ে উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিনের বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ২০০৯ এর ৩৪ (১) ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসককে সুপারিশ করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইমরান হোসাইন সজিব।
জানা গেছে, চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলায় আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করায় এই সুপারিশ করেন ইউওএনও ইমরান। কিন্তু রাজাপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও হলদিয়াপালং ইউনিয়নের এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে দূর্নীতি, হত্যার চেষ্টা, ডাকাতি, ধর্ষন ও ভ্রুন হত্যা সহ একাধিক মামলার অভিযোগ পত্র অনেকদিন আগে আদালতে গৃহিত হয়ে বিচারাধীন থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। জানা গেছে ঐ সব জনপ্রতিনিধিদের সাথে বিশেষ সখ্যতার কারনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছেনা।
আদালত সূত্রে জানাগেছে, উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী বিরুদ্ধে সরকারী ত্রানের চাল চুরির প্রমান পাওয়ার অভিযোগ আদালতে গৃহিত হয়েছে। সেই মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এছাড়াও তার ইউনিয়নের ছৈয়দ হামজা নামের এক ইউপি সদস্যকে অপহরণ করে হত্যা চেষ্টা মামলায়ও জাহাঙ্গীর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ পত্র গৃহীত হয়েছে। এই জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবেদন দিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় থেকে ২ বার প্রতিবেদন চাওয়া হলেও সেই প্রতিবেদন অজ্ঞাত কারনে ফাইলবন্ধি হয়ে আছে।
নারী এনজিও কর্মীকে ধর্ষণ ও ভ্রুন হত্যা মামলায় হলদিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদের ১ নাম্বার ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম মঞ্জুর আলমের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ পত্র গৃহিত হলেও গত দেড় বছরেও এই জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর এডভোকেট ফখরুল ইসলাম গুন্দু বলেন, হলদিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার হওয়ার সুযোগে ওই পরিষদে কাজ করতে আসা ইপসা নামে এক বেসরকারি সংস্থার নারী কর্মীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে গত দুই বছর যাবৎ শারিরিক সম্পর্ক করে আসছিলো মঞ্জুর আলম মেম্বার। তাকে বিয়ে করার জন্য ৩০০ টাকার একটি স্ট্যাম্পে বিয়ের ফর্দনামাও করেছিলেন এই জনপ্রতিনিধি। এর মধ্যে শারিরীক সম্পর্কের কারণে অন্ত:স্বত্ত্বা হয়ে পড়েন ওই নারী এনজিও কর্মী। তাকে ফুসলিয়ে ওষুধ খাইয়ে গর্ভপাত করে মামলার প্রধান আসামী মঞ্জুর আলম।
এ ঘটনায় ভিকটিম উখিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় এই জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে অভিযোগ পত্র দাখিল করেন। বর্তমানে এই মামলার বিচার কার্যক্রম চলছে।
স্থানিয় সরকার মন্ত্রনালয়ের ইউনিয়ন পরিষদ আইন সবার জন্য সমান হলেও উখিয়ায় চেহারা দেখে এই আইন প্রয়োগ করা হচ্ছে।
কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী বলেন, দেশের আইন সবার জন্য সমান। জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে একই অভিযোগে ভিন্ন ভিন্ন নিয়মে করা উচিত নয়।
উখিয়া উপজেলার ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার ভূমি সালেহ আহম্মদ বলেন, উপজেলা প্রশাসনের কাছে সকল জনপ্রতিনিধি সমান। সকলের জন্য আইনও সমান। উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রশিক্ষনের জন্য ভারত গেছেন। তিনি আসলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে।
জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, সকল জনপ্রতিনিধির জন্য আইন সমান। কোন জনপ্রতিনিধি ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হলে আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছেন। উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পাঠানো তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী বিষয়টি জেলা প্রশাসন স্থানীয় সরকার বিভাগকে জানিয়েছে। একই ভাবে অন্য কোন জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে যদি ফৌজদারি মামলায় আদালতে অভিযুক্ত হন, তাদের বিরুদ্ধেও একই ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক।