গত ২৮ অক্টোবর ’২৩ নয়াপল্টনে নাশকতার ঘটনায় যানবাহন ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের অন্যতম মূলহোতা নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি আবু তালেব মাসুম ও তার সহযোগী জজ মিয়া এবং গত ৩০ অক্টোবর ’২৩ কক্সবাজার উখিয়া থানাধীন রাজাপালং ইউনিয়নে নাশকতা ও অর্ন্তঘাতমূলক ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার এজাহারনামীয় আসামী সাইফুল সিকদার র্যাব-১৫ কর্তৃক গ্রেফতার
১। সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক দলসমূহের বিভিন্ন কর্মসূচীকে কেন্দ্র করে কতিপয় দুস্কৃতিকারী ও স্বার্থান্বেষী মহল হামলা ও নাশকতার মাধ্যমে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি করে জনমনে আতংক সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। গত ২৮ অক্টোবর ২০২৩ তারিখ রাজধানীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমাবেশকে কেন্দ্র করে দুস্কৃতিকারী ও সন্ত্রাসীরা রাজধানীর কাকরাইল, পল্টন, ফকিরাপলু ও মতিঝিলসহ বিভিন্ন স্থানে সাধারণ মানুষের উপর নৃশংস কায়দায় হামলা ও আক্রমণ চালায়। তারা গণপরিবহন, ব্যক্তিগত পরিবহন ও সরকারি বিভিন্ন যানবাহন ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ করে। র্যাব দুস্কৃতিকারী ও স্বার্থান্বেষী মহলের অপতৎপরতার সাথে জড়িতদের সনাক্তপূবর্ক আইনের আওতায় নিয়ে আসতে নজরদারী অব্যাহত রেখেছে।
২। সাম্প্রতিক সময়ে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকাসহ বিভিন্ন মহাসড়কে অগিড়বসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করে কতিপয় দুস্কৃতিকারী ও সন্ত্রাসী কর্তৃক গণপরিবহন, ব্যক্তিগত পরিবহণসহ বিভিন্ন যানবাহনে অগ্নিসংযোগ, হামলা ভাংচুরসহ বিভিন্ন ধরণের নাশকতা ও সহিংসতা চালায়। দুস্কৃতিকারী ও সন্ত্রাসী কর্তৃক এ সকল নাশকতা ও সহিংসতার সিসিটিভি ফুটেজ ও ভিডিও ফুটেজ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। র্যাব উক্ত নাশকতা ও সহিংসতার সাথে জড়িত দুস্কৃতিকারী ও সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।
৩। এরই ধারাবাহিকতায়, গত রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র্যাব-১ ও র্যাব-১৫ এর একটি আভিযানিক দল কক্সবাজারে যৌথ অভিযান পরিচালনা করে গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশে উপস্থিত থেকে নাশকতায় সরাসরি অংশগ্রহণকারী এবং পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন মহাসড়কসহ নারায়ণগঞ্জ এলাকায় যানবাহন ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজ দেখে সনাক্তকৃত নাশকতার অন্যতম মূলহোতা এবং প্রায় ১৫টি মামলার পলাতক আসামি নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি আবু তালেব মাসুম (৩৭), পিতা-হাজী নাসিরুল্লাহ এবং তার ঘনিষ্ঠ সহযোগি নারায়ণগঞ্জ জেলা জিয়া মঞ্চের সভাপতি নারায়ণগঞ্জ, রূপগঞ্জ থানাধীন মৃত রহিজ উদ্দিন এর পুত্র জজ মিয়া (৩৯), কে কক্সবাজার সদর থানাধীন কলাতলী এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়।
৪। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃতরা তাদের দলীয় শীর্ষ স্থানীয় নেতৃবৃন্দের নির্দেশনায় মাসুম এর পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে সাম্প্রতিক সময়ে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকায় সহিংসতা ও নাশকতা চালায়। মাসুম গত ২৮ অক্টোবর ২০২৩ তারিখ রাজধানীর পল্টন এলাকায় সমাবেশে যোগ দেয়ার জন্য নেতাকর্মীদের নিয়ে ঢাকায় যায়। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃতরা রাজধানীর পল্টন ও এর আশপাশের এলাকায় গণপরিবহন, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ, রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে নাশকতা সৃষ্টি করে। এসময় তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও গণমাধ্যমকর্মীদের উপরও হামলা চালায়। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃতরা নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ফিরে যায়। গ্রেফতারকৃত মাসুম এর পরিকল্পনা মোতাবেক তার অনুসারীরা লাঠিসোটা হাতে মিছিল করে সোডাউন দিয়ে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকায় মহাসড়কে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে জনমনে আতংক ও ত্রাসের সৃষ্টি করে রাস্তা অবরোধ করে গণপরিবহন, ব্যক্তিগত পরিবহনসহ বিভিন্ন যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে নাশকতা ও সহিংসতার তান্ডব লীলা চালায়।
৫। গ্রেফতারকৃত মাসুম গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে দায়েরকৃত ০৪টি নাশকতার মামলায় পলাতক আসামী। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে পূর্বে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানায় ১০টির অধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়। গ্রেফতারকৃত মাসুম ও অনুসারীদের এ সকল নাশকতা ও সহিংসতার সিসিটিভি ফুটেজ ও ভিডিও ফুটেজ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার এড়াতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এবং সবর্শেষ কক্সবাজারে আত্মগোপন করে। পরবর্তীতে আত্মগোপনে থাকাবস্থায় গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে তাকে র্যাব কর্তৃক গ্রেফতার করা হয়।
৬। গ্রেফতারকৃত জজ মিয়া ছিল মাসুম এর ঘনিষ্ঠ সহযোগী। সে মাসুম এর নির্দেশে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও মহাসড়কে গণপরিবহন, ব্যক্তিগত যানবাহন ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে রাস্তা অবরোধ করে নাশকতা ও সহিংসতা চালিয়েছে বলে জানা যায়। তার বিরুদ্ধে নারায়নগঞ্জ ও রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ০৪টির অধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়। এছাড়াও সে গ্রেফতারকৃত মাসুমের নির্দেশনায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার এড়াতে মাসুমের সাথে কক্সবাজারে আত্মগোপনে চলে যায় এবং আত্মগোপনে থাকাবস্থায় র্যাব কর্তৃক গ্রেফতার হয়।
৭। গত ৩০/১০/২৩ তারিখ নাশকতা সৃষ্টির মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক ও বিস্ফোরণ ঘটিয়ে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করার জন্য দায়েরকৃত কক্সবাজার উখিয়া থানার মামলা নং ৭৮/৬১৫, তাং ৩১/১০/২৩, ধারা-বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪ এর ১৫(৩)/২৫-ডি তৎসহ ১৪৩/১৮৬/৩৫৩/৪২৭/১০৯ পেনাল কোড এর আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে র্যাব-১৫, কক্সবাজার এর গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধিসহ তৎপরতা অব্যাহত থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সিপিসি-২, হোয়াইক্যং ক্যাম্প, র্যাব-১৫, কক্সবাজার এর একটি চৌকস আভিযানিক দল কক্সবাজার উখিয়া থানাধীন রাজাপালং ইউনিয়নের পশ্চিম সিকদারবিল এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে গত ১৭ নভেম্বর ২০২৩ তারিখ অনুমান ১৫.৩০ ঘটিকার সময় বর্ণিত মামলার তদন্তে প্রাপ্ত আসামী সাইফুল সিকদার(৩৭), পিতা-মৌলভী আব্দুর রহিম, সাং-পশ্চিম সিকদারবিল, ৫নং ওয়ার্ড, রাজাপালং ইউনিয়ন, থানা-উখিয়া, জেলা কক্সবাজার’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
৮। পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে গ্রেফতারকৃত আসামীদের সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।