চট্টগ্রাম ডেস্ক/উখিয়া নিউজ টুডে।। চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার এক ইউনিয়ন পরিষদে সদস্যদের ভোট ছাড়াই গায়ের জোরে প্যানেল চেয়ারম্যান বানানোর অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় ‘কথিত’ ওই প্যানেল চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ইউপি সদস্যের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর ও গুলিবর্ষণ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) সন্ধ্যায় নগরের ওআর নিজাম সড়কের হোটেল ওয়েলপার্ক মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে এসব অভিযোগ করেন ইউপি সদস্য মো. সাইফুল ইসলাম।
সাইফুল ইসলাম ১ নং চরতী ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের সদস্য এবং চরতী ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন ১নং ওয়ার্ডের সদস্য নুরুল মোস্তফা, ২নং ওয়ার্ডের সদস্য হানিফ চৌধুরী, ৪নং ওয়ার্ড সদস্য মো. নজরুল, ৫নং ওয়ার্ড সদস্য আব্দুল মালেক সিকদার, ৯নং ওয়ার্ড সদস্য আব্দুর রশিদ মাতুব্বর এবং সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডের (৭,৮,৯) সদস্য আকতার বেগম।
ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘২০২৩ সালের ২০ জুন স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রজ্ঞাপন জারি করার মাধ্যমে এমপি ড. আবু রেজা নদভীর শ্যালক এবং জামায়াত নেতা রাজাকার মুমিনুর রহমানের পুত্র ১নং চরতী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল্লাহ চৌধুরী বালু চুরির অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় সাময়িক বরখাস্ত হয়। ওই ইউনিয়ন পরিষদের আমরা উপস্থিত ৮ জন সদস্য সজ্ঞানে হলফ করে বলতে পারি, ইউনিয়ন পরিষদের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর হতে আজ পর্যন্ত কোন প্যানেল চেয়ারম্যান গঠনের বিষয়ে এজেন্ডা ছিলো না এবং আমরা কোন রেজুলেশনে স্বাক্ষর করি নাই।
এরপর হঠাৎ করে বর্তমান চেয়ারম্যান বহিষ্কার হওয়ার পরে ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য নুরুল আমিন নিজেকে ১নং প্যানেল চেয়ারম্যানর দাবি করে বলেন, সংসদ সদস্য ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নদভীর সুপারিশে দায়িত্ব পালন করবেন এবং এই বিষয়ে কেউ কোন প্রতিবাদ করলে তাকে মামলা দিয়ে জেল হাজত ঢুকিয়ে দিবেন এবং প্রয়োজনে প্রাণনাশের হুমকিও দেন। এই বিষয়ে এমপি নদভী সাহেবের ভাতিজা আ.ন.ম সেলিমও ইউপি সদস্য গণকে নুরুল আমিনের বিষয়ে কেউ যেন কোন কথা বা প্রতিবাদ না করে এমপি সাহেব বলেছেন বলে নানাপ্রকার চাপ ও ভয় দেখান।
‘কিন্তু আমরা তার এমন নীতিবহির্ভূত কার্যকলাপ বাস্তবায়নের প্রতিবাদ জানাই। এই বিষয়ে আমরা যৌথ স্বাক্ষরে মাননীয় জেলা প্রশাসক চট্টগ্রাম মহোদয় এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সাতকানিয়া মহোদয়কে লিখিতভাবে অভিযোগ জানাই। এতে নুরুল আমিন ক্ষিপ্ত হয়ে সংসদ সদস্য ড. আবু রেজা নদভীর নির্দেশে এবং তার ক্ষমতা ব্যবহার করে নানা প্রকার হয়রানি এবং প্রকাশ্যে হুমকি ধামকি অব্যাহত রাখেন।’
তিনি বলেন, ‘গত ১৯ জুলাই মধ্যরাত ৩টার দিকে দক্ষিণ চরতী গ্রামের আলী চান মিয়ার পাড়া্সথ আমার বসতবাড়িতে ইউপি সদস্য নুরুল আমিনের নেতৃত্বে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা আমার প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে হামলা চালায় এবং বাড়িঘর ভাঙচুর করে। এলাকার লোকজন জড়ো হয়ে আমি এবং আমার পরিবারের লোকজনের প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টায় এগিয়ে আসলে সন্ত্রাসীরা গুলিবর্ষন করে পালিয়ে যায়। আমি এবং এখানে উপস্থিত পরিষদের অন্যান্য সদস্যগণ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি, কখন কার উপর হামলা চালানো হয়।
ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা সদস্য আকতার বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার ছেলে এমপি নদভী সাহেবের পরিচালনাধীন আন্তর্জাতিক ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলো। তাকে এই এজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়ে চাকরীচ্যুত করেন এমপি নদভী এবং হুমকি প্রদান করেন তার কথা মতো না চললে ভবিষ্যতে আরো কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হবে। এমপি নদভী সাহেবের প্রত্যক্ষ ছত্রছায়ায় আমাদের অত্র এলাকা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়েছে। আজ আমরা কেউই শান্তিতে নাই।’
সাইফুল ইসলাম বলেন,এমপি এবং এমপির লোকজনের আদেশ-নির্দেশ বাস্তবায়ন না করলে আমাদের নির্যাতন করা হয়। ক্ষমতার প্রশ্রয়ে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের উপর এই ধরণের নিপীড়ন সুস্পষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘন।’
প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চেয়ে তিনি বলেন, ‘আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জনতার নেত্রী শেখ হাসিনার সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। মাননীয় নেত্রী আপনি মানবতার মা। আপনি ছাড়া অসহায় এই মানুষদের জন্য আর কোন আশ্রয় নেই। প্রিয়নেত্রী, আপনি দেখুন হাইব্রীড এমপির নির্যাতনে কিভাবে আমরা জীবনযাপন। আমি এবং আমার পরিবার আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় কর্মী। আপনার ডাকে আমরা সারাজীবন রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। আপনার কর্মীকে আজ জামায়াত হতে আগত এমপি ও তার পেটোয়া বাহিনী নির্যাতন করে এলাকাছাড়া করার পরিকল্পনা করছে। আমরা আপনার কাছ থেকে সুবিচার চাই।