বিশেষ প্রতিনিধি/উখিয়া নিউজ টুডে।। একসময় নুন আনতে ফুরিয়ে যেতো পান্তা, চলতো কোনো রকমে দিনযাপন। দরিদ্রতার কষাঘাতে জর্জরিত শৈশব কাটানো উখিয়া সদরের ঘিলাতলীর বাসিন্দা মোহাম্মদ মহিউদ্দিন স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আমলে মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানেই করেছেন নিজের ভাগ্য পরিবর্তন।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতার আর্শীবাদ থাকায় মাত্র ৮ বছর আগেও ফটোকপি আর কম্পিউটার টাইপিং এর দোকানে অপারেটরের কাজ করে কোনো রকম আয়-রোজগার করা মহিউদ্দিন এখন বনে গেছেন শত কোটি টাকা সম্পদের মালিক।
উখিয়া সদর স্টেশনের থানা রোডে দশ তলা ফাউন্ডেশনের বহুলভবন “ওপেন টাওয়ার”, জমি সহ প্রয় অর্ধশত কোটি টাকা সমমূল্যের সম্পদটির মালিকানা রয়েছে মহিউদ্দিনের।
এছাড়াও ওপেন এন্টারপ্রাইজ নামে নিজের প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রিক অসংখ্য টেন্ডার এবং বিপুল অর্থের সাপ্লাইয়ের কাজ আশ্রয়দাতা নেতার প্রভাব দেখিয়ে আদায় করে অবৈধ পন্থায় কোটি টাকা কামিয়েছেন তিনি।
উখিয়ায় ডাচবাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট শাখার পরিবেশক ওপেন এন্টারপ্রাইজ, লোক দেখানো ব্যবসার পাশাপাশি কক্সবাজার সহ উখিয়ার বিভিন্ন জায়গায় বিপুল পরিমাণ একর জমি কিনেছেন মহিউদ্দিন।
কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের উখিয়া রেঞ্জ এর কার্যালয়ের নিকটেই মহিউদ্দিনের পৈতৃক নিবাস৷ বিলাসবহুল ভাবে গড়ে তোলা এই নিবাসটি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সরকারি জমিতে, টাকা এবং ক্ষমতার কারণে যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেনি কখনো কেউ।
সম্প্রতি বিএনপির এক সমাবেশে উখিয়া উপজেলা বিএনপি সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সরওয়ার জাহান চৌধুরীর বক্তব্যেও উঠে আসে মহিউদ্দীনের কুকীর্তির গল্প।
বক্তব্যে মহিউদ্দিন’কে ইয়াবা গডফাদার আখ্যা দেন সরওয়ার জাহান চৌধুরী।
তিনি বলেন, ” আমাদের উখিয়াতেও শেখ হাসিনার প্রেতাত্মা রয়েছে, যার অন্যতম ইয়াবার টাকায় উখিয়া উপজেলার সর্বোচ্চ বিল্ডিং এর মালিক বনে যাওয়া মহিউদ্দিন। এই বিল্ডিংয়ে জাহাঙ্গীর চৌধুরীরও মালিকানা রয়েছে।”
এতো সম্পদের পেছনের টাকার উৎস কি? সেটি অনুসন্ধানে দুদকের সহায়তা চাওয়া হবে বলে জানান তিনি।
অবৈধ আয়ে অর্জিত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা সহ মহিউদ্দিন ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে দুদক তথা সরকার সংশ্লিষ্টদের দ্রুত আইনি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে অভিমত স্থানীয়দের এবং যেটি অপরাধীদের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলে মনে করেন তারা।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শামীম হোসাইন জানিয়েছেন, ” অপরাধী যেই হোক না কেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখন সক্রিয় তাই ছাড় পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। দুর্বৃত্তায়ন সহ দুর্নীতিতে জড়িতদের ব্যাপারে অভিযোগ পেলে করণীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
এদিকে অভিযোগের প্রেক্ষিতে মহিউদ্দিনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে নিজের এলাকাতেও মহিউদ্দিনের দেখা মিলেনি বলে নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় সহ তার প্রতিবেশী অনেকেই।