Ukhiya News Today

৭ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ২২শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ৫ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

শিরোনামঃ

বদির মাদক সাম্রাজ্যের উস্তাদ কারাগারে, সেনাপতি জাহাঙ্গীর এখনো লাপাত্তা || শাহপরীর দ্বীপ জামায়াতের সহযোগী সদস্য সম্মেলনে জেলা আমীর আনোয়ারী || যেভাবে তৈরি হয়েছিল মুসলমানদের প্রথম কিবলা ‘আল-আকসা’ || ফের ৯ কৃষক অপহরণ টেকনাফে! || ইলেকশন করবেন জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী – ভাই এড.শাহজালাল চৌধুরীর ঘোষণা || মানুষের কথা ভেবে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছি – প্রতিষ্ঠাতা শাহজাহান চৌধুরী || উখিয়ায় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের আড়ালে জমি দখল নিয়েছে মাওলানা ওবায়দুল্লাহ হামযা। || পাঠ্যবইয়ে যে পাঁচটি পরিবর্তন আসছে || জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার আগুন, ভাঙচুর || রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকান্ডে বসতঘরসহ ১৮টি দোকান পুড়ে ছাই || উখিয়ার প্রথম নারী এসিল্যান্ড যারীন তাসনিম তাসিন || বাতিল হতে পারে ৯টা থেকে ৫টার অফিস সময় || রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সাথে সম্পর্কের ফাটল ধরলো বিএনপির? || দালাল নিয়ন্ত্রিত উখিয়া ভূমি অফিস, ঘুষ ছাড়া কাজ হয় না || দুদকের মামলায় চট্টগ্রাম আদালতে আলোচিত আওয়ামী সাংসদ “বদি” পর্যাপ্ত নিরাপত্তা || ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সাকিবের বাবার নেতৃত্বে মাগুরায় ২ হত্যাকাণ্ড || রেল স্টেশনের ডিসপ্লে বোর্ডে ‘আওয়ামী লীগ জিন্দাবাদ’, কর্মকর্তা বরখাস্ত || পাঠ্যবইয়ে যুক্ত হচ্ছে জুলাই অভ্যুত্থানের গ্রাফিতি || দুদকের মামলায় চট্টগ্রাম আদালতে আলোচিত সাবেক সাংসদ “বদি” পর্যাপ্ত নিরাপত্তা || স্কুল দপ্তরীর আত্মহত্যা: চিরকুটে লিখে গেলেন “চাকরিই দায়ী” ||

ইতিহাস-কারিগরের কলমে প্রগতি সাহিত্য

বাংলা ভাষায় প্রগতি সাহিত্য আন্দোলনের ইতিহাসের অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে। রোশনাই নামের বইটি সাজ্জাদ জহিরের লেখা। এ বই নিয়ে কথা বলা মানে সমান গুরুত্ব দিয়ে দুটো বিষয় মাথায় রাখা, সাহিত্য আন্দোলন আর সাজ্জাদ জহির।

ঘটনার শুরু ১৯৩২ সালে একটা ছিপছিপে উর্দু ছোটগল্পের সংকলন ছাপার মধ্য দিয়ে। নাম আঙ্গারে। অর্থ অঙ্গার। লেখক চারজন। আহমদ আলী, সাজ্জাদ জহির, রাশিদ জাহান ও মাহমুদুজ্জাফর। গল্পগুলো সে সময়ের সামাজিক আর শাস্ত্রীয় কাঠামোকে আক্রমণ করে লেখা। বইটি নিয়ে চারদিকে আগুন জ্বলে উঠল। ব্রিটিশ সরকার নিষিদ্ধ করল বইটি। ১৯৩৩ সালের ৫ এপ্রিল লেখকদের একজন মাহমুদুজ্জাফর, একটা বিবৃতি ছাপলেন দ্য লিডার পত্রিকায়। ইংরেজি লেখাটির নামের অর্থ দাঁড়ায় ‘আমরা কি কণ্ঠরোধ মেনে নেব?’ সেখানে তিনি সাফ জানালেন যে এ বইয়ের জন্য তাঁরা দুঃখ প্রকাশ করতে রাজি নন। তাঁরা শুধু এমন যেকোনো লেখা প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা নিশ্চিত করতে চান। তিনি প্রস্তাব করলেন ভারতবর্ষের সব ভাষার লেখকদের নিয়ে অবিলম্বে প্রগতিশীল লেখকদের একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠার।

সাজ্জাদ জহির লক্ষ্ণৌ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পাস করেছেন। এরপর পড়ালেখা অক্সফোর্ডে। সেখানেই ঘটে সাম্যবাদী দীক্ষা। ছেলের গতিক সুবিধার না বুঝে এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারক জহিরের বাবা ছেলেকে আবার লন্ডনে লিংকনস ইনে আইন পড়তে পাঠিয়ে দেন।

লন্ডনে ভারতীয় শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটা দল গঠন করেন জহির। এই দলে ছিলেন মুহাম্মদ দিন তাসির, মুলক রাজ আনন্দ, জ্যোতির্ময় ঘোষ, প্রমোদ রঞ্জন সেনগুপ্ত। গড়ে উঠল লন্ডনে ভারতীয় প্রগতিশীল লেখক সংঘ। ১৯৩৪ সালের ২৪ নভেম্বর লন্ডনের ডেনমার্ক স্ট্রিটের নানকিং রেস্টুরেন্টের পেছনের দিকে এক ছোট ঘরে প্রথম সভায় সংঘের সভাপতি হলেন মুলক রাজ আনন্দ। সম্পাদক প্রমোদ রঞ্জন সেনগুপ্ত।

১৯৩৫ সালে দেশে ফিরে সাজ্জাদ জহির সারা ভারতে ঘুরে প্রগতি লেখক সংঘের শাখা স্থাপন করতে লাগলেন। রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে উল্লেখযোগ্য লেখকের সমর্থন জোগাড় করলেন। কয়েক বছর আগে সোভিয়েত ইউনিয়ন ঘুরে আসা রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা করে সমর্থন আদায় করলেন। পরে তিনি রবীন্দ্রনাথের গোরা উপন্যাস উর্দুতে অনুবাদ করেছিলেন।

ঝড়ের গতিতে সব এগিয়ে যাচ্ছিল। এই গতির পেছনে ছিল বিশ শতকের ত্রিশের দশকের উত্তাল আর্থসামাজিক আবহ। ম্যাক্সিম গোর্কি, আন্দ্রে জিদ, আন্দ্রে মালরোর মতো লেখকেরা লড়ে যাচ্ছিলেন ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে। সাহিত্যকে যে সমাজ বদলের কাজে লাগানো যায়, সে ধারণা উপমহাদেশেও দানা বেঁধেছে তত দিনে। রোশনাই বইয়ে এসব লেখা হয়েছে বিশদভাবে। বইটির ভূমিকায় আহমদ আলী খান জানাচ্ছেন, সাজ্জাদ জহিরের কাছে রবীন্দ্রনাথ স্বীকার করছেন যে তাঁরা সাধারণ মানুষের সান্নিধ্যে জাননি এবং জানেন না, এই খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষগুলো কীভাবে জীবন যাপন করে (পৃষ্ঠা: ১৫)।

১৯৩৬ সালের ৯-১০ এপ্রিল লক্ষ্ণৌতে হলো নিখিল ভারত প্রগতি লেখক সংঘের আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ। অবিভক্ত ভারতের নানান ভাষার সাহিত্যিক ও রাজনৈতিক কর্মীরা যোগ দিলেন। এখানে সাজ্জাদ জহির ব্যাখ্যা করলেন, এই সাহিত্য আন্দোলনের প্রধান উদ্দেশ্য—সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ ও ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য ভারতের বিভিন্ন ভাষা-অঞ্চলের প্রগতিশীল শিল্পীদের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করা।

সভাপতির অভিভাষণে মুনশি প্রেমচন্দ একবাক্যে আন্দোলন সংগঠনের উদ্দেশ্য ব্যক্ত করেছিলেন, সৌন্দর্যের মানদণ্ড বদলাতে হবে আমাদের।

প্রগতি লেখক সংঘ যে প্রেমচন্দের বলা লক্ষ্য সফল করেছিল। সারা ভারতের প্রায় সব প্রধান ভাষায় এই সংগঠন তার অনপনেয় প্রভাব রেখেছে। পরে অবশ্য টানাপোড়েন শুরু হয়েছিল।

ইতিহাসের এই গুরুত্বপূর্ণ পর্বের অন্যতম স্রষ্টা সাজ্জাদ জহির তাঁর রোশনাই বইয়ে এই ইতিহস যেমন লিখেছেন, তেমনি ইতিহাসকে ব্যখ্যাও করেছেন। বইটি তিনি লিখেছেন ১৯৫৩ সালে, রাওয়ালপিন্ডি ষড়যন্ত্র মামলায় জেল খাটার সময়। বইতে এই ইতিহাস ১৯৪৭ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত এসে থেমেছে। এরপর দেশভাগের পরে সংগঠনও ভাগ হয়ে যায়। ভারতে সংগঠন স্তিমিত হয়ে যায়। আর পাকিস্তানে নিষিদ্ধ হয় ১৯৫৪ সালে।

Share Now

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *