- নিজস্ব প্রতিবেদক।
উখিয়ায় প্রতিনিয়ত প্রকাশ্যে বন বিভাগের পাহাড় সাবাড় করে তৈরি করছে বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা! যার ফলে ব্যাপক ধ্বংস হচ্ছে বন ও পরিবেশ। পুরো উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে পাহাড় কাটা হচ্ছে। উপজেলার সর্বত্রে দিনে-রাতে, প্রকাশ্যে-গোপনে চলছে পাহাড় ও বন নিধন। অথচ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কোন খবর নেই। উখিয়ার সাধারণ মানুষ বলছেন, ব্যাপক ভূমিধসের আশঙ্কায় দিন পার করছে এলাকাবাসী। অন্যদিকে পরিবেশবাদীরা বলছেন, সম্প্রতি সময়ে অবৈধভাবে পাহাড় কাটতে গিয়ে পাহাড়ধসে অনেকের মৃত্যুও হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা মিলে, রাজাপালং, পালংখালী, হলদিয়াপালং, রত্নাপালং এর বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় নিধনে প্রতিযোগিতায় নেমেছে একটি বৃহত্তর সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটটি পাহাড় কেটে ট্রাক, ডাম্পার ও ট্রাক্টর বোঝাই করে মাটি বিক্রি করছে। এই মাটি ইটভাটা, কৃষি জমি ভরাট, ভূমিদস্যুদের অবৈধ জায়গা দখল ও পুকুর ভরাটসহ নানা কাজে এ পাহাড়ি মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে পাহাড়ধসে জানমালের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী।
স্থানীয় পরিবেশবাদীরা বলছেন, পাহাড় কেটে মাটি পাচারকারীদের ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা না নিলে অতীতের মতো যে কোনো সময় পাহাড়ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে। এদিকে, রাজাপালং ইউনিয়নের হরিণ মারা এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে টিলা ও বড় বড় পাহাড় কেটে সাবাড় করার খবর পাওয়া গেছে।
স্থানীয়রা বলছেন, মধ্যম রাজা পালং এলাকার জাফর আলমের পুত্র রেজাউল হাসান প্রকাশ (রেজা) নুরুল আলমের পুত্র হেলাল, মৃত সৈয়দ আকবরের পুত্র সৈয়দ করিম, রাজা পালং এর হরিণ মারা এলাকার মোহাম্মদ পুত্র আবু তাহের, ফলিয়াপাড়া এলাকার গুটি শুক্কুরের মালিকানাধীন ১০/১৫টি ডাম্পা গাড়ি দ্বারা প্রতিনিয়ত রাজা পালং এর হরিণমারা বাগানের পাহাড় ও মধুরছড়া এলাকায় প্রকাশ্যে পাহাড় কেটে বিভিন্ন স্থানে মাটি বিক্রি করছেন।
এলাকাবাসীরা বলছেন, বন কর্মকর্তাদের সাথে সমন্বয় করে যৌথ ভাবে পাহাড় নিধন করছেন এই পাহাড় খেকোরা। সরে জমিনে গিয়ে দেখা মিলে, হরিণ মারা বাগানের পাহাড় নামক এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মৃত আবদুল হাকিমের পুত্র কালু (প্রকাশ মহিষ কালু) দখলে থাকা বন বিভাগের জায়গায় ও মৃত মূসা আলীর পুত্র আবুল কালামের দখলে থাকা বন বিভাগের পাহাড় থেকে এবং মৃত মনু মিয়ার পুত্র মো. হোসেনের দখলে থাকা পাহাড় থেকে ও মৃত আবুল সামার পুত্র বদি আলমদের (প্রকাশ বদু) দখলে থাকা বন বিভাগের জায়গা থেকে পাহাড় কেটে প্রতিদিন ২ থেকে আড়াই শত গাড়ি মাটি বিক্রি করছে এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে স্থানীয়রা। পরিবেশবিধ্বংসী এই বেআইনি কার্যকলাপ বন্ধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে আরও কঠোর হয়ে বন ও পরিবেশ রক্ষার অনুরোধ জানান স্থানীয়রা।
তথ্য সুত্রে জানা গেছে, রেজাউল হাসান (প্রকাশ রেজা মলই) এর বিরুদ্ধে বিট কর্মকর্তা সাজ্জাদকে হত্যা মামলার চার্জশীট ভুক্ত (জি,আর ২১২) এর অন্যতম আসামী হওয়ার পরেও স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে প্রতিনিয়ত পাহাড় সাবাড় করে যাচ্ছে।
স্থানীয় সাংবাদিক মিসবাহ আজাদ বলেন, আমাদের কাছে প্রতিনিয়ত তথ্য আসে ইনানী রেঞ্জধীন বন বিভাগের কোন জায়গায় কেউ একটা পুরাতন বাড়ি সংস্কার করলে অথবা পাহাড় কাটলে কিংবা গাছ কাটার আগে রেঞ্জ কর্মকর্তা ফিরোজ আল-আমিনকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে পাহাড় কাটার অনুমতি নিতে হয়। কোন গরিব মানুষ টাকা দিতে না পারলে বিভিন্ন ভাবে হয়রানিসহ মামলার হুমকি দেন। তার এমন কর্মকান্ডের কারণে পাহাড় কাটা থেকে শুরু করে বন অপরাধ মুটেও কমছেনা। বাড়ছে বন বিভাগের জায়গায় দখলবাজি৷
পাহাড় কাটার বিষয়টি রাজা পালং এর রেজার কাছে জানতে চাইলে তিনি পাহাড় কাটার কথা অস্বীকার করে প্রতিবেদককে বালের সাংবাদিক বলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে হুমকি দিয়ে ফোন কেটে দেন।
উখিয়া বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা বলেন, বনের পাহাড় কাটার বন্ধসহ বন রক্ষা করতে আমরা সব সময় প্রস্তুত যদি কেউ পাহাড় কাটার মতো জঘন্যতম অপরাধ করে থাকেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজা পালং বিট কর্মকর্তা প্রতিনিয়ত পাহাড় কাটার কথা শিকার করে প্রতিবেদককে জানান, “রেজাসহ আপনি যাদের নাম বলেছেন তাদের ডাম্পার গাড়ি আছে সেটা সত্য। অনেকের নামে মামলাও আছে। এবং এরা যেহেতু পাহাড় কাটার সাথে জড়িত সবার নামে মামলা দেওয়া হবে বলে জানান।
প্রসঙ্গত, গত ৩১ মার্চ রাত সাড়ে তিনটার সময় উখিয়ার রাজা পালং এর হরিণ মারা এলাকায় পাহাড় কেটে মাটি কেটে পাচারে বাধা দেওয়ায় উখিয়ায় বন বিট কর্মকর্তাকে ডাম্পট্রাকে চাপা দিয়ে হত্যা করার পরেও থেমে নেই এই পাহাড় কাটা।